ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় কিছু মিডিয়া বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে জড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক কাশ্মীরের পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে এ ধারা আরও স্পষ্ট হয়েছে, যেখানে ভারতের কিছু প্রভাবশালী গণমাধ্যম বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে কুৎসা রটনা চালাচ্ছে।
এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহিদ উর রহমান। তিনি বুধবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এনডিটিভির মত সংবাদমাধ্যম আদানির হাতে যাওয়ার পর থেকে ভারতের মিডিয়া দৃশ্যপট আমূল বদলে গেছে। আজকের ভারতীয় মিডিয়া মূলত সরকারের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে।”
ডা. জাহিদ বলেন, “কাশ্মীরে যে হামলা হয়েছে, সেখানে অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই ঘটনাকে ঘিরে কিছু ভারতীয় মিডিয়া বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। যেমন, আজতক বাংলা ও ইন্ডিয়া টুডে চ্যানেল দাবি করছে, কাশ্মীরে হিন্দুদের হত্যা নিয়ে ‘বাংলাদেশি ইসলামি’ ইউনূস নাকি কাতারে নারীদের সঙ্গে উল্লাস করেছেন। একটি সাধারণ ছবি—যেখানে ড. ইউনূস কিছু বাংলাদেশি নারী প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করছেন—তাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ড. ইউনূস কাতারে সরকারি সফরে রয়েছেন, সেখানে একাধিক আন্তর্জাতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর ফেসবুক পেজেও এই সফরের প্রতিটি কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। “এমন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে এভাবে একটি সফরের প্রেক্ষিতে টেনে এনে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো অত্যন্ত নিন্দনীয়,” মন্তব্য করেন ডা. জাহিদ।
তিনি আরও বলেন, “ভারতের গণমাধ্যম আজ একটি বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির প্রোপাগান্ডা মেশিনে পরিণত হয়েছে। আজতক দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি ঘনিষ্ঠ অবস্থান নিয়ে সংবাদ প্রচার করছে, এবং এই ধরনের খবর প্রকাশ করে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে তৎপর।”
পশ্চিমবঙ্গে সামনের বছরের বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে এমন প্রচারণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইঙ্গিত করে ডা. জাহিদ বলেন, “এই ধরণের বিদ্বেষ ছড়িয়ে রাজনৈতিক লাভ তোলার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর প্রভাব শুধু ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনীতিতেও পড়বে—যার বাইরে বাংলাদেশও নয়।”
তিনি ভারতীয় সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং তাদের মিডিয়া ও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যাতে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ বন্ধ হয়।