শুক্রবার, রাত ১১:০৭, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুক্রবার, রাত ১১:০৭, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাশ্মীর সীমান্তে টানা অষ্টম রাত ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলি চলছে

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে টানা অষ্টম রাতেও গোলাগুলি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতেও সীমান্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। ২২ এপ্রিল জম্মু–কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই প্রায় প্রতি রাতেই দুই দেশের মধ্যে গুলি বিনিময় চলছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির বরাতে জানা যায়, জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুল্লা, পুঞ্চ, নওশেরা ও আখনুর সেক্টরের বিপরীত পাশে পাকিস্তানের দিক থেকে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালানো হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়। এই সংঘর্ষ ৭৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলওসির বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে পড়ে বলে ভারতীয় বাহিনীর দাবি।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ২৪ এপ্রিল রাত থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ করছে। ঠিক এই সময় ভারত সরকার সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়, যার কিছুক্ষণের মধ্যেই এলওসিতে গুলি চালানো শুরু হয়।

ভারতীয় সেনা সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার পাকিস্তানি সেনারা আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে জম্মুর পারগওয়াল সেক্টরে প্রবেশ করে এবং গুলি চালায়। ওই দিনই ভারত ও পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) পর্যায়ে হটলাইনে আলোচনা হয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, পাকিস্তানকে বিনা উসকানিতে হামলা বন্ধের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

পেহেলগামের হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা, পাঞ্জাবের আত্তারিতে একমাত্র চালু থাকা স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দেয় এবং তৃতীয় দেশের মাধ্যমে সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত করে।

পাকিস্তান ভারত সরকারের পানির প্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার সামিল’ বলে উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি, ভারত unilateralভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলের অধিকার রাখে না।

উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মোট ৩,৩২৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে—যার মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত (আইবি) প্রায় ২,৪০০ কিলোমিটার, নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) ৭৪০ কিলোমিটার এবং প্রকৃত স্থল অবস্থানরেখা (এজিপিএল) ১১০ কিলোমিটার।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে উভয় দেশের ডিজিএমওরা ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিলেও সাম্প্রতিক উত্তেজনা সে চুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান যদি সিমলা চুক্তি স্থগিত করে, তবে পুরো সীমান্ত অঞ্চলে অস্ত্র বিরতির বাধ্যবাধকতা ভেঙে পড়তে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top