রফিক ইসলাম
পরের লাইনটা বলার আগেই লাইন কেটে গেলো। আবির সংযোগটা পুনঃস্থাপনের অনেক চেষ্টা করেও আর পারলো না।
মেয়েটার নাম শশী। আবিরের সাথে পরিচয় ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর। আলাদা ডিপার্টমেন্টে হলেও ভার্সিটির বেশির ভাগ সময় দুজনের একসাথেই কাটে। পরিচয়ের প্রথম থেকেই আবিরের প্রানান্ত চেষ্টা সত্তেও মেয়েটা এখনো ওকে লাইনেই রেখেছে।
আগামীকাল শশী’র জন্মদিন। আবির খুব করে চাচ্ছিলো আগামীকালই যেন তার চাওয়াটা পরিণতি পায় । কিভাবে দিনটাকে সেলিব্রেট করা যায় সেটা নিয়েই কথা বলছিলো কিন্তু হঠাৎ ইলেক্ট্রিক লাইন অফ হয়ে যাওয়ায় তাতে ছেদ পড়ে। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সংযোগস্থলে ত্রুটি থেকেই এই বিভ্রাটের শুরু। বিদ্যুৎহীন থাকতে হতে পারে আগামী প্রায় ৬ ঘন্টা। আবির তার কৌমুদী প্রিয়তমায় এতটা মগ্ন ছিল যে বিদ্যুতের ব্যাপারটা তখনও তার মগজে গাঁথে নাই। জন্মদিনের নানা কল্পনা-পরিকল্পনায় এপাশ ওপাশ করতে করতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পরে। যখন ঘুম ভাঙ্গে তখনও বিদ্যুৎ আসে নাই তবে মনার মা (কাজের বুয়া) এরই মধ্যে এসে পড়েছেন এবং যথারীতি পানি নাই তাই রান্না হবে না ঘোষণা দিয়ে বিদায়ের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন। আবির টাউয়ালে আর ব্রাশ নিয়ে বাথরুমে যায়। বালতিতে ধরে রাখা অর্ধেকটা পানি দিয়ে কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
নিচে নেমে আবির দ্রুত আগায় বুথের দিকে, কিছু টাকা উঠাতে হবে। এক্সট্রা খরচের ঝুঁকি এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু একি! বুথের সামনে প্রায় ২৫-৩০ জনের সারিবদ্ধ লাইন। অগত্যা আবির টাকা না তুলেই রিকশা নিয়ে মেইন রোডের দিকে আগায়। রিকশায় বসেই ট্রাই করে শশীকে বাট লাইন এনগেজড।
মেইন রোডে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখে আবির বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টায়, একটা সিএনজি’তে উঠে পরে যেন দ্রুত মেট্রো স্টেশনে পৌঁছা যায়। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরেই বাধে বিপত্তি-বিকল্প লাইন(পথ) ব্যবহার করায় আটকে দেয় পুলিশ। ড্রাইভার তার লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বের করে দিলে পুলিশ সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। ওদিকে পুলিশের এহেন কর্মযজ্ঞে আবির হতাশ হয়ে নিজে থেকেই টাকা সাধে যেন তাদের ছেড়ে দেয় কিন্তু ঘটে তার বিপরীত, উল্টো পুলিশ তাকে সন্দেহ করে নিচে নামায়। সে সবকিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশের গাম্ভীর্য মুখে অমন কদর্য প্রশ্নে আবির কিছুটা ভড়কে যায়-কতদিন এই লাইনে ? আপনার সব কিছু চেক করা হবে। উপায়ন্তর না থাকায় আবির পুরো চেকিং প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করে।
মেট্রো স্টেশনে নেমেই আবির ফোন বের করে শশীর সাথে কথা বলবে বলে কিন্তু ফোন হাতে নিতেই সে খেয়াল করে ব্যাটারির পাওয়ার লাইনে ব্যাকআপ শেষ তাই ফোন বন্ধ। শেষমেশ অদম্য আবির কোনোমতে প্রথম লাইন পার করে টিকেট কেটে দ্বিতীয় লাইনে যায় কিন্তু সংখ্যার আধিক্য থাকায় সে প্রথম ট্রেন মিস করে। পরের ট্রেনে সওয়ার হয়ে আবির যখন গন্তব্যে পৌঁছায় তখন প্রায় আড়াই ঘন্টা লেইট, সহপাঠীর মাধ্যমে জানতে পারে শশী প্রায় ৩০মিনিট আগেই লিভ নিয়েছে। ততক্ষনে মোবাইল ব্যাটারির মতো আবিরের পাওয়ার ব্যাটারিও লোয়ার লেভেলের সিগন্যাল দিচ্ছে।
চার্জিং লাইনে রেখেই আবির মোবাইল ফোন অন করে আর সাথে সাথেই সে একটা টেক্সট মেসেজ পায়। দুই লাইনে সেই মেসেজে শশী যেটা লিখেছে তাতে আবির মোটামুটি নিশ্চিত যে তার পরিকল্পনার পরী আর তার আকাশে নাই। বাকি যা কল্পনা তাতেও ক্ষুধার তীব্রতা গ্রাস করেছে।
তপ্ত দুপুর, গ্রীষ্মের কড়া রোদে আবির রেল লাইন ধরে হাটছে। পাশের রিক্সা গ্যারেজ থেকে ভেসে আসা গানের লাইন যেন ব্যাঙ্গাত্মক সুরে আবিরের সাথে তাল-লয় মিলাচ্ছে–
প্রেমের নাম বেদনা—