সামসুন নাহার
জীবনের এক পর্যায়ে এসে কাউকে এতটা ভালোবেসে ফেলি, যেন সে-ই আমাদের আকাশ, আমাদের পৃথিবী, আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, এক বিশাল সমুদ্র। একসাথে তারা গুনব, স্বপ্ন আঁকব, এক আকাশের নিচে সারাটি জীবন কাটিয়ে দেব—এই ভাবনাগুলো অজান্তেই মন জুড়ে বসে যায়। যার অস্তিত্বই হয়তো ছিল ক্ষণিকের। আমরা ভাবি, সে পাশে থাকবে; কিন্তু একদিন সেই মানুষটিই হয়তো হারিয়ে যায়, আর সঙ্গে করে নিয়ে যায় আমাদের স্বপ্ন, শান্তি, বিশ্বাস—সব।, তখন সেই মানুষটিকে হারানো মানেই পুরো পৃথিবীটা যেন ভেঙে পড়ে। কখনো কি মনে প্রশ্ন জাগে—সেই মানুষটা থাকবে তো? যে মানুষটার সঙ্গে তুমি জীবনের আকাশ রাঙাতে চেয়েছিলে, তার হাতটা কি চিরকাল তোমার হাতেই থাকবে? হয়তো না। হয়তো একদিন সে চলে যাবে। নিয়ে যাবে তোমার আকাশ, রঙ, আলো, বাতাস। রেখে যাবে শুধু জমে থাকা শুন্যতার মেঘ, বুকের ভিতর। সেই মেঘ ঝরে ঝরে একদিন হয়ে উঠবে সমুদ্র সমান অশ্রু। তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে সেই অশ্রু-সমুদ্রের তীরে, একা। তখন বুঝবে, তোমার আকাশবিহীন পৃথিবীটা কী ভয়ানক একাকীত্বে ভরা! কারণ? কারণ তুমি তাকে দিয়েছিলে সব। নিজের মতো করে বাঁচা, হাসা, চলা—সবকিছু তাকে দিয়ে ফেলেছিলে। আর এই ‘সব’ দেওয়ার মাঝে তুমি ভুলে গিয়েছিলে নিজের ভেতরের আমিকে, যে থাকলে মানুষ একা হয়েও ভেঙে পড়ে না। ভালোবাসা মানেই তো নিজেকে মুছে ফেলা নয়। ভালোবাসা মানে কাউকে আপনার জগৎ করে তোলা নয়, বরং তার পাশে নিজের জগৎকে দাঁড় করিয়ে রাখা। কাউকে “সব” না দিয়ে, “ততটুকু দিতে হবে—যতটুকু দিলে ভালোবাসা বাঁচে, আত্মসম্মান থাকে, নিজেকে হারাতে হয় না।