রবিবার, রাত ১১:২১, ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রবিবার, রাত ১১:২১, ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুজানগরে জেলা প্রশাসকের মানবিক উদ্যোগ, গাজনার বিলে কৃষকের মুখে হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা:

তীব্র খরতাপের মধ্যে এক পশলা শান্তির বৃষ্টি যেন নেমে এলো পাবনার সুজানগরের গাজনার বিল পাড়ের কৃষকদের জীবনে। আর এই শান্তির পরশ বুলিয়ে দিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো: মফিজুল ইসলাম। তার উদ্যোগে গাজনার বিলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া কৃষকদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব করেছে। গাজনার বিল একটি বিশাল কৃষি এলাকা। এখানে দিনভর অক্লান্ত পরিশ্রম করেন কৃষক ভাইয়েরা। জৈষ্ঠ মাসের প্রখর রোদে তাদের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। আশেপাশে সুপেয় পানির তেমন কোনো উৎস না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো তাদের। বাধ্য হয়ে দূষিত পুকুরের পানি পান করতে হতো, যা প্রায়শই অসুস্থতার কারণ হতো। এই অসহনীয় কষ্টের কথা জানতে পারেন জেলা প্রশাসক মো: মফিজুল ইসলাম। কৃষকদের প্রতি অগাধ সহানুভূতিশীল এই কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং কৃষকদের সাথে কথা বলেন। তাদের সমস্যার গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিলের বিভিন্ন স্থানে সুপেয় পানির পাম্প স্থাপনের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অল্প সময়ের মধ্যেই গাজনার বিলের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে স্থাপন করা হয় নলকূপ ও পানির ট্যাংক। বটবৃক্ষের ছায়ায় ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা পেয়ে কৃষকদের মুখে ফুটেছে অনাবিল হাসি। এখন তারা কাজের ফাঁকে তৃষ্ণার্ত হলে সহজেই ঠান্ডা পানি পান করে ক্লান্তি দূর করতে পারছেন। কথা হয় গাজনার বিলের প্রবীণ কৃষক এর সাথে। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “বাবা, ডিসি সাহেব যা করলেন, তা আমরা কোনোদিন ভুলব না। এই বয়সে এত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছিল না। রোদে পুড়ে কাজ করে যখন গলা শুকিয়ে যেত, তখন নোংরা পানি ছাড়া আর কিছু জোটেনি। এখন বটতলায় বসে ঠান্ডা পানি খেলে কলিজা জুড়িয়ে যায়। আল্লাহ্ ডিসি সাহেবের মঙ্গল করুক।” গাজনার বিলের প্রতিটি কৃষক জেলা প্রশাসকের এই মানবিক উদ্যোগে অত্যন্ত খুশি ও কৃতজ্ঞ। তারা বলছেন, মো: মফিজুল ইসলাম শুধু একজন প্রশাসকই নন, তিনি একজন প্রকৃত জনদরদি মানুষ। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, “কৃষকরা আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তাদের কষ্ট দেখলে আমি ব্যথিত হই। গাজনার বিলের কৃষকদের সুপেয় পানির অভাবের কথা জানতে পেরে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাদের মুখে হাসি দেখতে পেয়ে আমি আনন্দিত। আমার এই উন্নয়ন যদি তাদের সামান্যতম উপকারও করে থাকে, সেটাই আমার বড় প্রাপ্তি।” জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে পাবনার অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা চাইলে কতটা আন্তরিকতা ও সংবেদনশীলতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন, তা মো: মফিজুল ইসলামের কাজ আবারও প্রমাণ করলো। গাজনার বিলের কৃষকরা এখন শুধু তাদের জমিতেই সোনালী ফসল ফলাবেন না, তাদের হৃদয়ে গেঁথে রাখবেন একজন মানবিক জেলা প্রশাসকের অমলিন স্মৃতিও।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top