ঈদযাত্রায় তীব্র দুর্ভোগ: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভোর থেকে শুরু হওয়া যানজট রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্তও স্বাভাবিক হয়নি। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটারজুড়ে থেমে থেমে যান চলাচলের কারণে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বৃষ্টির সঙ্গে এই দীর্ঘ যানজট যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। বিশেষ করে খোলা ট্রাক ও পিকআপে করে যাত্রা করা সাধারণ যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন। বাস, ট্রাক, পিকআপের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে।
বগুড়াগামী গার্মেন্টসকর্মী সালাউদ্দিন মিয়া জানান, তিনি সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকার একটি গার্মেন্টস থেকে বের হয়ে ৫০০ টাকা ভাড়ায় একটি ট্রাকে ওঠেন। যানজটের ভেতর দিয়ে বিকেল ৩টায় তিনি এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
সিরাজগঞ্জগামী মল্লিকা খাতুন বলেন, তিনি সকাল ৮টায় গাবতলী থেকে রওনা দিয়ে যানজটের কারণে বিকেল ২টা ৩০ মিনিটে এলেঙ্গার পৌলী এলাকায় পৌঁছান।
বাস না পেয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে খোলা পিকআপে করে বাড়ির পথে রওনা দেন বগুড়ার আব্দুল হাই। তিনি বলেন, “যানজটের সঙ্গে বৃষ্টি যুক্ত হয়ে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।”
একই অভিজ্ঞতার কথা জানান যাত্রী মাসুদ রানা। তিনি বলেন, “ঈদের সময় বাড়ি যেতেই হয়, কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে খোলা গাড়িতে এমন যাত্রা হবে, তা ভাবিনি।”
মামুন নামে আরেকজন যাত্রী বলেন, “স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খোলা পিকআপে যাচ্ছি। বৃষ্টির পর কাগজ দিয়ে ঢেকে বসে থাকতে হয়েছে। কিছুই করার নেই।”
এলেঙ্গা হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শরীফ জানান, যান চলাচল ধীরগতিতে চলছে, তবে পুরোপুরি স্থবির হয়নি। চাপ কমাতে ঢাকামুখী যানবাহনগুলোকে ভূঞাপুর হয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত দুই লেনে যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮ হাজার ৫৫৫টি যানবাহন পার হয়েছে, যার ফলে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৫৯ লাখ চার হাজার ২৭০ টাকা। অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং চার দফায় টোল আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয় বলে জানান সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল।
যানজট নিয়ন্ত্রণ ও মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬০০-এর বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। এছাড়াও সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।