শনিবার, সকাল ৭:৪৩, ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শনিবার, সকাল ৭:৪৩, ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরে ‘জীবন মহল’ পার্কে হামলা: আতঙ্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, নেই মামলা

দিনাজপুরে ‘জীবন মহল’ পার্কে হামলা: আতঙ্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, নেই মামলা

প্রতিনিধি, দিনাজপুর

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কাঞ্চন মোড় এলাকায় অবস্থিত ‘জীবন মহল ফ্যামিলি পার্ক অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার’-এ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা ঘটেছে। অসামাজিক ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে এ হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কোনো মামলা হয়নি।

শুক্রবার দুপুরে পার্কের প্রধান ফটকটি বন্ধ দেখা যায়। নিরাপত্তাকর্মীর দেখা মেলেনি। ফটকের সামনে পড়ে থাকা জিনিসপত্র হামলার চিহ্ন বহন করছিল। দীর্ঘ ডাকাডাকির পর এক কর্মচারী দরজা খোলেন। আতঙ্কিত মুখে তিনি দেখান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পার্কের বিভিন্ন অংশ।

পার্কের মালিক আনোয়ার হোসেন ওরফে জীবন চৌধুরী একজন স্বতন্ত্র রাজনীতিক। তিনি দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে পৈতৃক জমিতে একটি গোলঘর ও মেডিটেশন সেন্টার দিয়ে শুরু করে তিনি ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন পিকনিক স্পট, কমিউনিটি সেন্টার, মৎস্য খামার, সুইমিং পুল, মসজিদ, রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট।

হামলায় রিসোর্টের ১৫টি কক্ষের মধ্যে ১১টিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। নষ্ট করা হয়েছে আসবাবপত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন সামগ্রী। পুড়িয়ে ফেলা হয় মেডিটেশন সেন্টারের আসবাব ও চিকিৎসা সামগ্রী। রেস্তোরাঁ, সভাকক্ষ ও পার্কের পিকনিক স্পটেও চালানো হয় ভাঙচুর।

‘জীবন উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি কার্যালয়, যেখানে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা হতো, সেটিও হামলার শিকার হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, কাগজপত্র নষ্ট এবং নগদ অর্থ লুট করা হয়েছে।

পার্কের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে মেডিটেশন সেশন হতো এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের ওষুধ দেওয়া হতো। তিনি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম তারা শুধু প্রতিবাদ জানাবে, কিন্তু তারা যেন সবকিছুই ধ্বংস করে ফেলেছে। কেউ কেউ হেলমেট পরে এসেছিল।”

পার্কে বর্তমানে নীরবতা বিরাজ করছে। যেখানে একসময় ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়, সেখানে এখন শুধুই আতঙ্ক।

মুঠোফোনে মালিক জীবন চৌধুরী বলেন, একটি মহল ভুল তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে উসকেছে। “জীবন মহল কোনো দরগা নয়, এখানে ‘লাইফ শাইনিং মেথড’ প্রয়োগ করা হয়, যা অনেকটা কোয়ান্টাম মেথডের মতো,”—বলেন তিনি। তার দাবি, রাজনীতিতে তাকে বাধা দিতেই এসব অপপ্রচার ছড়ানো হয়েছে। তিনি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান।


এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় এবং ঘটনার বিচার নিশ্চিত হয় কি না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top