নির্বাচন বৈধ না হলে তার কোনো অর্থ নেই: অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন যদি বৈধ বা আইনসম্মত না হয়, তাহলে তার কোনো অর্থ নেই। তিনি জানান, একটি গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করাই তার প্রধান লক্ষ্য।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে (সিএনএ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের পর তিনি আর সরকারে থাকার কোনো পরিকল্পনা রাখেন না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর অনেকটাই অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছি। তবে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যে ধরণের দুর্নীতি, অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ ছিল, তা সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি জানান, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তিনটি প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। এই তিনটি স্তম্ভের ভিত্তিতেই তাদের কাজ এগিয়ে চলছে।
গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের বিচারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ইউনূস বলেন, বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে পুরোনো সংকট আবার ফিরে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমাদের দায়িত্ব একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করা, যাতে জনগণ তাদের মতপ্রকাশ করতে পারেন আনন্দের সাথে।”
প্রসঙ্গত, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনকালে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাকে ফেরত আনার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করলেও ভারত এখনো কোনো সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে ইউনূস জানান, ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন হাসিনা দেশে অস্থিরতা তৈরির সুযোগ না পান। তিনি বলেন, “আমরা বলেছি—আপনারা তাকে রাখতে পারেন, কিন্তু তিনি যেন আর দেশকে অস্থিতিশীল করার কোনো সুযোগ না পান।”
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে যেমন ভালো সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি ভারতের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় তার প্রশাসন। তিনি জানান, ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’—সাতটি পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট গঠনের সম্ভাবনাও দেখা হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্রথমে দায়িত্ব নিতে না চাইলেও ছাত্রনেতাদের অনুরোধ এবং জনগণের আত্মত্যাগ তাকে রাজি করায়। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই যাত্রার শেষ প্রান্তে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।
“আমি চাই, যুবসমাজ ব্যালটের মাধ্যমে তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা প্রকাশ করুক। একটি ভালো সরকার আসুক, যা গণতান্ত্রিক নীতিমালা অনুসরণ করবে,”—বলেন অধ্যাপক ইউনূস।