রবিবার, রাত ৪:১১, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রবিবার, রাত ৪:১১, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুণিতন্ত্র: শান্তি দর্শনের আলোকে

সমাজ গঠনের জন্য যেমন সুশাসন প্রয়োজন, তেমনি শাসনের ধরনও শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে শাসক নির্ধারণ করা হয়, যেখানে জনপ্রিয়তা বা সংখ্যার ভিত্তিতে ক্ষমতা লাভ করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় — শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতা কি সত্যিকার শান্তি ও ন্যায় নিশ্চিত করতে পারে? এখানেই উঠে আসে গুণিতন্ত্র বা যোগ্যতার ভিত্তিতে শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা, যা শান্তি দর্শনের আদর্শের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।

গুণিতন্ত্র শব্দটি গঠিত হয়েছে “গুণ” এবং “তন্ত্র” — এই দুটি শব্দের সংমিশ্রণে। এর অর্থ এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যেখানে নেতৃত্ব বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয় গুণবান, নৈতিক, এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদের হাতে। এখানে নেতৃত্ব লাভের পূর্বশর্ত হলো নৈতিকতা, জ্ঞান, সহনশীলতা ও মানবিকতা — যা শান্তি দর্শনের মূল ভিত্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

শান্তি দর্শন এমন একটি চিন্তাধারা, যা অহিংসা, ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা, সহনশীলতা এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানকে গুরুত্ব দেয়। শান্তির জন্য কেবল বাহ্যিক অস্ত্রবিরতি নয়, প্রয়োজন আভ্যন্তরীণ নৈতিক শান্তি এবং ন্যায়ভিত্তিক নেতৃত্ব। গুণিতন্ত্র এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি এমন নেতৃত্ব তৈরি করে যারা আত্মনিয়ন্ত্রণে পারদর্শী, বিবেকবান, এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী।

গণতন্ত্রের তুলনায় গুণিতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো — এটি অযোগ্য কিন্তু জনপ্রিয় নেতৃত্বের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। যখন নেতৃত্বে আসেন সত্যিকার গুণীজন, তখন রাষ্ট্র পরিচালনা হয় দূরদর্শিতা, সংযম ও সেবার মানসিকতা নিয়ে। ফলে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, বৈষম্য হ্রাস পায় এবং সামাজিক শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

তবে, গুণিতন্ত্রের চ্যালেঞ্জও রয়েছে — কে ঠিক করবেন কে গুণী আর কে নয়? এর উত্তর হতে পারে, একটি মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা, স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি, এবং জনগণের নৈতিক বিকাশ।

✅ উপসংহার:

শান্তি দর্শনের মূল কথা হলো — ন্যায়, সহানুভূতি ও অহিংসার ভিত্তিতে একটি সমাজ গঠন। গুণিতন্ত্র সেই দর্শনকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের উপযোগী ব্যবস্থা হতে পারে। এটি সমাজে এমন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে, যারা সত্যিকারের শান্তি ও কল্যাণের জন্য কাজ করেন। তাই, একটি টেকসই শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে আমাদের দরকার গুণের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের চিন্তাভাবনা — অর্থাৎ গুণিতন্ত্রের বিকাশ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top