রবিবার, সকাল ৯:৫০, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রবিবার, সকাল ৯:৫০, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার নাও থাকতে পারে, ভারতকে সজাগ থাকতে হবে: শশী থারুর

ভারতের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও বিশ্লেষক শশী থারুর সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটে যাওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ওপর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘শিবির’-এর বিজয় শুধুই একটি ছাত্ররাজনীতির ঘটনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি ‘টেকটোনিক পরিবর্তনের’ ইঙ্গিত দেয়, যা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে।

জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের বিজয়: একটি সতর্কবার্তা

থারুর এনডিটিভিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লেখেন, ১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবারের মতো একটি ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহাসিকভাবে প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কেন্দ্রস্থলে জয়ী হলো। তার মতে, এই বিজয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক হতাশা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমতের বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, “এই ফলাফল ইসলামী মৌলবাদের প্রতি সরাসরি সমর্থন নয় বরং দুটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের প্রতি—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—গভীর অনাস্থার প্রতিফলন।” অনেক তরুণ ভোটার, যারা জামায়াতের অতীত ইতিহাসের সাথে সরাসরি পরিচিত নন, তারা এখন এটিকে একমাত্র ‘কম কলুষিত’ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছেন।

রাজনৈতিক শূন্যতা ও উগ্রপন্থার উত্থান

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তৈরি হওয়া রাজনৈতিক শূন্যতার বিষয়টিও থারুর বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন একটি দুর্বল অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে, যা জনগণের দিকনির্দেশনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।

এই পরিস্থিতি জামায়াতের মতো ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার জামায়াতের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করেনি।

ভারতের জন্য নতুন বাস্তবতা

শশী থারুর আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে জামায়াতের অংশগ্রহণে গঠিত কোনো সরকার ভারতের জন্য জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কারণ, একটি ইসলামপন্থী সরকার পাকিস্তান-সমর্থিত আইএসআই বা অন্যান্য উগ্র উপাদানদের জন্য সীমান্তে সক্রিয় হওয়ার ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দিতে পারে।

তার ভাষায়, “ভারতের পররাষ্ট্রনীতি হয়তো এখনো ‘অহস্তক্ষেপ’ নীতিতে দৃঢ়, কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের রাজনীতি কখনোই শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়।”

সতর্ক প্রস্তুতির আহ্বান

থারুর জোর দিয়ে বলেন, ভারতকে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। নয়াদিল্লিকে এমন এক ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যেখানে বাংলাদেশের সরকার হয়তো আর ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ বা স্থিতিশীল নাও থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top