
সরকার যখন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা দিয়েছে, সেনাবাহিনী মনে করছে যে, নির্বাচন হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে এবং সার্বিক স্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সেনাবাহিনীর বর্তমান নেতৃত্ব ও সেনাপ্রধানের প্রতি সদস্যদের শতভাগ আনুগত্য রয়েছে এবং বর্তমানে বাহিনী আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও ঐক্যবদ্ধ।
ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘আলফা’-তে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক)-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন এবং এজি শাখার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, “গত ১৫ মাস আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমরা চাই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে হোক এবং এরপর সেনাবাহিনী আবার সেনানিবাসে ফিরে যাক।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সেনাবাহিনীও সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রত্যাশী। নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হবে, এবং আমরা আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারব।”
সেনাসদরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনকালে প্রায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ সদস্য মাঠে মোতায়েন করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে, এমনকি আসন ভিত্তিক ক্যাম্প স্থাপন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা সক্রিয় থাকবে।
গুজব ও বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে:
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে। তবে সেনার প্রতিটি সদস্য প্রধান ও সিনিয়র নেতৃত্বের প্রতি শতভাগ আনুগত্য প্রদর্শন করছে।”
গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের বিষয়:
মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি বহাল আছে কি না, সে বিষয়ে এখনও আইনগত জটিলতা রয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান জানান, “আইসিটি অ্যাক্ট ১৯৭২ এবং আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২—উভয়ই বিশেষ আইন। আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “সেনা কর্মকর্তাদের অধিকার এবং সুবিধা রক্ষার পাশাপাশি গুম-খুনের শিকারদের পরিবারের প্রতিও আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। সরকার যদি আর্মি অ্যাক্ট অনুযায়ী বিচার পরিচালনা করতে চায়, আমরা সেদিকে প্রস্তুত।”
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিন মামলায় ২৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর মধ্যে সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তাকে ২২ অক্টোবর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সেনাসদর জানিয়েছে, তারা সরকারের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে এই বিষয়গুলোর সুষ্ঠু ও আইনি সমাধান নিশ্চিত করার পথে রয়েছে।