শান্তি দর্শন
শান্তি মুক্তির তোরণ। মুক্তির পথে ‘শান্তি’ হলো জীবনের এক মধ্যবর্তী অধ্যায়—যেখানে মোহ-বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার সাধনা সবচেয়ে সহজতর হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, শান্তি প্রতিষ্ঠা ব্যতীত কেউই প্রকৃত মুক্তি লাভ করতে পারে না।
জাগতিক মানুষ শান্তি কামনা করলেও, সে নিজেই অশান্তির মূল কারণ হয়ে ওঠে। এই দ্বন্দ্বের মূল উৎস তার মুক্তির গন্তব্য সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং কর্ম ও আদর্শের পারস্পরিক বৈপরীত্য। এর ফলে সৃষ্টির প্রতি আসক্ত মন শান্তির পরিবর্তে ভোগ করে সুখ-দুঃখের অবিরাম জ্বলন্ত প্রবাহ, যা তাকে নিয়ে যায় ব্যর্থতা ও ধ্বংসের পথে।
অন্যদিকে, ভোগবাদী সমাজব্যবস্থা ব্যক্তির আদর্শ ও আদর্শিক কর্মকে গ্রাস করে ফেলে পুঁজিবাদের হীন কৌশলে। পুঁজিবাদ যেমন মানুষের মেধা, মনন ও শ্রমকে শোষণ করে সাম্রাজ্য রক্ষার নামে বনসাই করে রাখে, তেমনি ধীরে ধীরে মানুষের মনুষ্যত্বকেও নিঃশেষ করে দেয়। সেই কারণেই মুক্তির পথ সুগম করতে হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য — এবং তা কেবল গুণিতান্ত্রিক ব্যবস্থা দ্বারাই সম্ভব।
শান্তিবাদ প্রতিষ্ঠার গুণিতান্ত্রিক আন্দোলন ইতিহাস জুড়ে বরেণ্য ও মহান ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমেই হয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারি না, গ্রহণও করি না। ফলে শান্তিবাদ অধরাই থেকে যায়। বরং এর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় নানা মিথ্যাচার, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরও বিস্তৃত হয়।
এর ফলশ্রুতিতে মানব সমাজ ক্রমেই ভয়াবহ মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব বলা হলেও বাস্তবে সে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের বিপরীতে গিয়ে নিজের অস্তিত্ব ও সৃষ্টির প্রতি সহিংস, নিকৃষ্ট এবং হিংস্ররূপে পরিণত হচ্ছে।
কেন মানবজাতি এই দুর্দশায় পতিত হলো, এবং কীভাবে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব—এই প্রশ্নগুলির উত্তর অনুসন্ধানই ‘শান্তি দর্শন’-এর মূল লক্ষ্য।
‘শান্তি দর্শন’ হলো শান্তি প্রতিষ্ঠার এক প্রাচীন, বিজ্ঞানসম্মত এবং চিরনবীন পদ্ধতি—যা সর্বক্ষণ অনুশীলনযোগ্য হলেও যুগে যুগে উপেক্ষিত হয়ে এসেছে।
এই গ্রন্থটি রচনার সময় আমি আমার সকল সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা সঙ্গে নিয়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনারা যদি এই গ্রন্থের ত্রুটি ও অপ্রতুলতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে সংশোধনের পরামর্শ প্রদান করেন, তবে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

Reviews
There are no reviews yet.